সাংবাদিকতা-১


সাংবাদিকতা
জানার আগ্রহ মানুষের দুর্নিবার। আবার কোনো ঘটনা জেনে তা অন্যেকে জানানোর জন্য কৌতূহলী মানুষও কম নয়। তথ্য প্রযুক্তর এযুগে মানুষ চায় খুব দ্রুত তথ্য পেতে। প্রতিনিয়ত বদলে যাওয়া পরিবেশের গতি প্রকৃতি জানতে মানুষ তথ্য জানতে চায়। কিছু মনুষ আছেন যারা মানুষকে তথ্য জানানোর এ চ্যালেঞ্জিং কাজকে পেশা হিসেবে নিতে পছন্দ করেন। টেবিল চেয়ারে বন্দি নয়টা-পাঁচটার অফিস তাদের ভাল লাগেনা। তারা চান তাদের প্রতিটি দিন শুরু হোক নতুনভাবে। নতুনের সাথে পরিচয়ে। ব্যস্ততায় কাটুক প্রতিটি দিন। যাদের মধ্য আছে চ্যালেঞ্জ নেয়ার দুঃসাহস, যাদের আছে সৃষ্টিশীলতা তাদের জন্য দেশে তৈরি হয়েছে সাংবাদিকতার অনেক ক্ষেত্র। যেমন-রেডিও ও ব্রডকাস্ট জার্নালিজম সহ সকল প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়া।যাই হোক আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস সেইসব তরুণের জন্য যারা এখনও সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেয়নি। নানা কারণে হয়ত তারা সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
আমি একটি বিষয় অর্থাৎ ব্যক্তিত্ব বিকাশ লেখার পর আপনাদের ব্যপক সারা পেয়েছি তাই সময়ের চাহিদা অনুযায়ি সাংবাদিকতা বিষয়টি বেছে নিলাম। আপনাদের সারা পেলে এটিও চালিয়ে যাব।
গোড়ার কথাঃ- অনেকের মতে, প্রথম সংবাদপত্র পাওয়া যায় জুলিয়াস সিজারের আমলে খ্রিস্টপূর্ব ৫০ সালে। আর প্রথম বিলি করা সংবাদপত্রের খোঁজ পাওয়া যায় চীনে ৭৫ খ্রীস্টাব্দের দিকে। এছাড়া ঊনবিংশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের ফলে মুদ্রণ পদ্ধতির যে বিবর্তন হয় তা সংবাদপত্রকে নিয়ে যায় অন্য এক উচ্চতায়।
প্রাচীনের প্রাজ্ঞতার সঙ্গে আধুনিকের দর্শন, বৈজ্ঞানিকের জ্ঞান, নিজের ও অন্যান্য সময়ের ইতিহান, অর্থনীতির মূল শর্ত, সামাজিক-রাজনৈতিক জীবন ও চিন্তাভাবনা ও উপলব্দী এব্ং চাহিদা উপস্থাপন করাই একজন সাংবাদিকের মূল কর্তব্য।
সংবাদ কিঃ-
সংবাদ বা খবর ইংরেজীতে News। অনেক বিজ্ঞজন বলেছেন প্রধান চারটি দিক North, East, West ও South এই শব্দমালার আদ্যাক্ষর সমন্বয়ে গঠিত। সব ঘটনা সংবাদ নয়। সংবাদ একটি ছোট শব্দ হলেও এর তাৎপর্য় অনেক ব্যাপক। অভিধানে সংবাদকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে- ১.কোনো ঘটনা বা প্রস্তাব সম্পর্কিত বিবরণ।২.কোনো সাম্প্রতিক ঘটনা বা এ পর্যন্ত অজানা জিনিস সম্পর্কিত খবর বা তথ্য। ৩.চার্লস এ. ডানার ভাষায়- ইতোপূর্বে মনোযোগ আকৃষ্ট হয়নি অথচ সমাজের একটা বৃহৎ অংশকে কৌতুহলী করে তোলে এমন যে কোনো বিষয়ই সংবাদ।৪.Lord Northcliffe- If a dog bites a man, it is not news, but if a man bites a dog it is a news. এতক্ষণ বিভিন্ন সাংবাদিক ও লেখকদের দেয়া ‘সংবাদ’ এর সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করেছি। তাঁদের প্রদত্ত সংজ্ঞায় চমৎকারিত্ব, অভিনবত্ব ও নতুনত্ব রয়েছে।
মোটকথা, যা কিছু মানুষের মনে আবেক, ভয়, কান্না, হাসি, দুঃখ ও আনন্দের অনুভূতি জাগায় তাই খবর।

কিছু বিষয় আগে যেনে রাখাই ভালঃ-এবারে আপনাদেরকে কিছু গুরুত্ব পুর্ন শব্দ মালার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যেগুলো আপনার সফল সাংবাদিকতার অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করবে। যেমন, প্রত্যক্ষদর্শি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নির্ভরযোগ্য সুত্র, এলাকা বাসী, গোপন সুত্র, জানা যায়, পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অমুক সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ জানায়, সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকেই মনে করেন, এলাকা বাসীর সাথে আলাপ কালে জানাযায়, প্রত্যক্ষদর্শী(রা) জানায়/সূত্রে জানা যায়, বিএনপি/ আওমিলিগের নেতারা জানান, বিএনপি/জামাত নেতারা বলেন, একাধিক প্রার্থীর সাথে সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমারদেশ/নয়াদিগন্ত/বিডিরিপোর্ট—কে বলেন, নেতৃবৃন্দ বলেন, এলাকাবসী ও অমুক থানা সূত্রে জানা যায়, অমুক থানার ওসি মোঃ অমুক লালের কণ্ঠকে(যে কোনো পত্রিকা হতে পারে) জানান, অমুক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমুক জানান, এব্যপারে অমুক থানার ওসি অমুক বলেন, অমুক গ্রামের বাসিন্দারা জানান, পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।
উপরোক্ত শব্দমালা গুলো আপনার চলার পথে যখন তখনই প্রয়োজন হবে তাই এগুলোর যথাযথ ব্যবহার রপ্ত করুন।
একটি কথা বলে রাখা দরকার, ভারতের বিখ্যাত সাংবাদিক ও কলাম লেখক ইয়াছিন দালাল কেবল সাংবাদিকতার উপর ৬৫ টি বই লিখে জায়গা করে নিয়েছেন ‘লিমকা বুক অব ওয়ার্লড রেকর্ডস’ এ। ১৯৭৩ সালে সৌরাস্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংবাদিকতা বিভাগে যোগদানের পরই তিনি সাংবাদিকতার উপর নানা বই লিখতে শুরু করেন।

চলবে—

সাংবাদিকতা

লেখালেখি-১
সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যার তুলনা আর হয় না। যেমন ধরুন এই পেশায় এলে সেলিব্রেটি হওয়ার রাস্তাটা অনেকটা সোজা হয়ে যায়। চুল দাড়ি পাকলেই আবার আপনি বুদ্ধিজিবি বনে যেতে পারবেন অনায়াসেই। আর নিরাপত্তার কথা বলছেন? কার সাহস আছে সাংবাদিকের উপর মাস্তানি করবে? একবার করেই দেখুক না!! ঐ ব্যটাকে দুদিনেই দেশের সেরা ঘৃণ্যতম ব্যক্তিতে পরিণত করার রাস্তাটা তো এই সাংবাদিকতার পেশাই। তাই সাংবাদিকতার পেশাকে হেলা ফেলায় দেখবেন না। আসুন নিজের ক্যারিয়ারের জন্য সাংবাদিকতার পেশাটা বেছেনিতে দেরি না করি।
প্রথমেই বলে রাখছি সাংবাদিকতা পেশায় সফল হতে আপনাকে কোনোভাবেই জার্নালিজমে ভর্তি হয়ে চার চারটি বছর নষ্ট করা চলবে না। কারণ আপনি জার্নালিজমের যত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টই হন না কেনো আপনাকে কিছু কিছু বিষেশ বিষয়ের উপর পারদর্শী হতেই হবে। আর সেরকম যোগ্যতা থাকলে কিসের ডিগ্রি কিসের কি? আপনার সফলতা অবস্যম্ভাবী। আসুন আর দেরি না করে শুরু করি।
প্রথমত:-
সাধারণ সাংবাদিকতা শিক্ষায় আপনাকে শিখানো হবে যে কোন ঘটনাকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তরে সাজাতে হবে। এই প্রচলনের উপর যথেষ্ট সম্মান রেখেই আপনাকে একই জিনিস মনে করিয়ে দিতে চাই। যে কোনো ঘটনার উপর প্রতিবেদন করার আগে আপনাকে কি? কোথায়? কিভাবে? কখন? এবং কেনো? এই পাচটি প্রশ্নের আলোকে সাজাতে হবে। আশা করি সেটা আপনার জন্য তেমন কঠিন কোনো বিষয় নয়।
২য়ত
এবারে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দ মালার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যেগুলো আপনার সফল সাংবাদিকতার অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করবে। যেমন, প্রত্যক্ষদর্শি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নির্ভর যোগ্য সুত্র, এলাকা বাসী, গোপন সুত্র, সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকেই মনে করেন, এলাকা বাসীর সাথে আলাপ কালে জানাযায়।
উপরোক্ত শব্দমালা গুলো আপনার চলার পথে যখন তখনই প্রয়োজন হবে তাই এগুলোর যথাযথ ব্যবহার রপ্ত করুন।
উদাহরন_ধরুন সাভারে দুই রাজনোইতিক দল সি এন জি এবং জি এম টি দলের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে। এখন আপনাকে যদি বলা হয় সি এন জি দলকে ডূবাইতে হবে তাহলে এভাবে খবর লিখুন, গতকাল রাজধানীর সাভারে সি এন জি দলের কর্মিদের সাথে জি এম টি দলের সমর্থকদের ব্যাপক ধাওয়া পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। (এবার এটা ওটা যা লেখার লিখুন এবং ক জন আহত হল এবং কজন নিহত হল তা লিখুন, এখানে খেয়াল রাখতে হবে নিহতের সংখ্যা সঠিক রাখতে হবে কিন্তু আহতের সংখ্যা আপনাকে যেন জি এম টি দলের অনুকুলে যায় সে অনুপাতে লিখতে হবে) এবার ঘটনার বর্ণনায় আপনাকে এই শব্দমালার সাহায্য নিতে হবে।
উদাহরণ – প্রত্যক্ষদর্শিদের সাথে কথা বলে যানা যায় যে জি এম টী দলের কর্মীরা তাদের নিজস্ব টেন্টে বসে আড্ডাদেয়ার সময় হঠাৎ করেই সি এন জি দলের এক কর্মি রাসেল ঐ পথ দিয়ে হেটে যাবার সময় জি এম টি দলের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করে। এতে জি এম টি দলের সদস্যরা ঐ কর্মিকে আদর করে বুঝাতে গেলে অদুরেই দাঁড়িয়ে থাকা সি এন জি দলের ক্যডার রা জি এম টি দলের কর্মিদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।
এবার মনে করেন আপনাকে বলা হল সি এন জি দলের প্রধান জমির আলীকে ডুবাইয়া এক খান রিপোর্ট করতে হবে তাইলে আপনেকে উপরের শব্দমালার দারস্থ হইতেই হইবে।
উদাহরন-২
শিরোনমটা অবশ্যই আকর্ষনীয় হতে হবে যেমন কিছুটা এই রকম “সিলেটের টেন মার্ডারের পেছনে কলকাঠী নেড়েছেন সি এন জি দলের প্রধান”
কৌশল
কেন সি এন জি দলের প্রধানের নাম না লিখে শুধু পদবীর কথা লেখবেন?
কারণ হল একঢিলে একাধিক পাখি মারা হবে, এখানে সি এন জি দলের মান ইজ্জত ও ঐ দলের প্রধানের মান ইজ্জত নিয়া টানাটানি পড়ে যাবে। শিরোনামেই উদ্দেশ্য আহিলের এই কৌশল ছাড় দিলেই আপনার ক্ষতি।
এবার দেখুন কিভাবে ঐ শব্দগুলো দিয়ে পর্নাঙ্গ একটা রিপোর্ট তৈরি করা যায়।
ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেটের আলোচিত টেন মার্ডারের নেপথ্যের নায়কদের নাম বারিয়ে আসছে। গতমাসে গ্রেফতার হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী পাতলা জলিল কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সিলেটের টেন মার্ডারের পেছনে জড়িত আছেন সি এন জি দলের কতিপয় শীর্ষ নেতা। দু সপ্তাহ আগে পাতলা জলিলকে জিজ্ঞাসাবাদে এরকম তথ্য পাওয়া গ্যেছে বলে জানিয়েছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। পাতলা জলিলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের একটি গোয়েন্দা দল তৎক্ষনণাৎ সিলেটে ছুটে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিবি কর্মকর্তার তরফ থেকে জানা যায় যে তদন্তকারীদল পাতলা জলিলের দেয়া তথ্যের পক্ষে কিছু আলামত পেয়েছেন। গত সপ্তাহের প্রথম দিকের সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের আই জি শিমুল কান্তি বলেছিলেন পাতলা জলিলের কাছ থেকে সিলেটের টেন মার্ডারের ব্যপারে কিছু গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। ঐ সংবাদ সম্মেলনের পর গত কাল ডিবি পুলিশের ঐ কর্মকর্তা আমাদের প্রতিবেদক কে এমন তথ্য দিলেন। ঐ খবরের ভিত্তিতে আমাদের দৈনিক জমকালো পত্রিকার একদল সাংবাদিক সিলেটে যান এবং এলাকা বাসীর সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে সি এন জি দলের প্রধান জমীর আলীর সেক্রেটারীর সাথে নিহত দশনেতার সাথে টেন্ডার সংক্রান্ত মতবিরোধ চলছিল। এদিকে কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে যে পাতলা জলিলের এমন তথ্য প্রদানের এবং ডিবি পুলিশের এমন অগ্রগতির খবর সি এন জি দলের প্রধান জমির আলি সমমনা পুলিশের কর্মকর্তা ও আইনজীবিদের দারস্থ হচ্ছেন………………………… এভাবে লিখে ফেলুন কয়েক পৃষ্ঠা।
৩য় অধ্যায়
এবার উক্তি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু মেধার পরিচয় দিতে হবে। ধরুন কোন রাজনৈতিক নেতার শাক্ষাৎকার নিচ্ছেন, শাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে তিনি বললেন, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে বাংলাদেশ আজ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাই এই দেশ কে নতুন করে গড়ে তুলতে হলে আমাদেরকে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের তৈরীতে মনযোগী হতে হবে”
এখন আপনাকে যদি বলা হয় এই রাজনৈতিক নেতাকে যেভাবেই হোক জনগনের কাছে ঘৃণীত করে তুলতে হবে তাহলে আপনার প্রতিবেদনের শিরোনাম হবে এরকম “বাংলাদেশকে বসবাসের অযোগ্য বললেন অমুক নেতা” এই খবরকে আরও মুখরোচক করতে আরও একটি রিপোর্ট লিখে ফেলতে পারেন এই শিরোনামে “দেশকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করলেন অমুক নেতা” আবার অন্যভাবেও লিখতে পারেন যেমন “দেশ দ্রোহী মন্তব্য করলেন অমুক নেতা”
এর পর দেখুন কি হয়, বাঙ্গালী বলে কথা, হুজুগে পড়ে ঘৃণাতো আছেই ফাসীর কাষ্ঠে ঝুলানোর দাবীও উঠবে এই নেতার বিরুদ্ধে। আর আপনার পদবী? দেখুন না লাফিয়ে কোথায় উঠে!!
আবার যদি আপনাকে বলা হয় যে এই নেতাকে জনপ্রিয় করে তুলুন তাহলে শিরোনামটি এভাবে লিখতে পারেন, “নতুন করে দেশ গড়ার আহবান জানালেন অমুক নেতা” আবার এভাবেও শিরোনামটি লিখতে পারেন “সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের তৈরীর শপথ ঝরে পড়লো নেতার কন্ঠে”
লিখেছেন ইকু।