বিবর্ণ সেই অতীত

গভীর মনযোগ দিয়ে পড়ার টেবিলে বসে পড়তেছি। ছোটবেলা থেকে পড়ালেখার প্রতি মনযোগী না হলেও ছাত্র হিসেবে খারাপ ছিলামনা। প্রত্যেক ক্লাশেই প্রথম অথবা দ্বিতীয় স্থান আমার দখলেই থাকত। ২০০৬ সালের ১৫ মে সন্ধায় পড়ার টেবিলে বসে হঠাৎ দরজার দিক থেকে আসা হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম। পেছনে ফিরে দেখি সানজিদা। এবার সাথে ওর বড় বোন সারমিনও এসেছে। কি আর করা! ওদের সাথে গল্প জুড়িয়ে দিলাম। আমি আবার এসবের পাল্লায় পড়লে লেখাপড়া গোল্লায় যাক তার চিন্তার ধার ধারেও ছিলামনা কোন কালেই। প্রথম সাক্ষাতেই সানজিদার সাথে আমার বেশ ভাব জমে উঠে। আমরা ঠিক করলাম আগামীকাল দুজনে অপরূপ সাজে সজ্জিত বিলে শাপলা তুলতে যাব। ওকে নিয়ে দিনভর শাপলা তোলার ইচ্ছায় কোসা নৌকা নিয়ে দুজনেই বাড়ির পাশের বিলে রওয়ানা দিলাম। আশেপাশে নানা রঙ্গের শাপলার সমাহার। অনেক শাপলা নিয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরলাম। তারপর এত এত শাপলা দিয়ে কি করা হল কিছুই জানতে পারলামনা। তবে গল্পে গল্পে সানজিদার কাছ থেকে জানতে পারলাম ওগুলো দিয়ে নাকি খুব সুন্দর করে মালা তৈরি করছে। পরের দিন বিকেলে ওর সাথে অন্যরকম মজা করা হল। আমি তখন ওকে মেজিক দেখানোর ইচ্ছায় আমার পায়ের পাতা আমগাছের ডালে বাজিয়ে ঝুলছি ঠিক বাদুরের মত। হঠাৎ পা ফসকে পড়ে যাওয়ায় আমার হাটুর নিচের অংশের অনেক খানি জায়গা ছুলে গর্ত হয়ে যায়। এতে সানজিদা ভীষণ বিচলীত হয়ে যায়। মজার ব্যপার হল বিষয়টি ও বেমালুম ভুলেই যায় যা আজও আমার মনে আছে সাথে সেই চিহ্নও। দিনের পর দিন আমাদের বন্ধুত্ব ও ভালবাসার তীব্রতা বাড়ছিল।অনেকদিন পর..
এবার অনেকদিন থাকবে ভাবে বুঝলাম। সানজিদা আসাতে ওর সাথে বেশ ভালই ভাব জমছিল। একদিন ওকে নিয়ে আমাদের বাড়ির অদূরের ব্রিজে প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য দেখতে গেলাম। পানকরি মাছ ধরার দৃশ্য, মাছরাঙ্গার শিকারের অপেক্ষায় অধির আগ্রহ নিয়ে বসে থাকার দৃশ্য, বউ-ঝিদের কলসি কাখে পানি নেওয়ার দৃশ্য, ছোট ছেলে-মেয়েদের সাঁতার কাটার দৃশ্য, রাজহাস আর খল্লা মাছের খেলা দেখতাম জম্পেস বসে। তখন ওর সাথে ফটোসেশনও করা হয়। নদীর পাড় দিয়ে ঘুরে ঘুরে আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমা। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে এলে বাড়ি ফিরে আসলাম। ও আমাদের এলাকার প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলি- ‘আমাদের এলাকার চারদিকে মাছরাঙ্গা, টুনটুনি, ঘুঘু, ডাহুক, বাবুই, শালিক, দোয়েল, পাপিয়া প্রভৃতি পাখির কলকাকলি, নদীর কুল কুল ধ্বনি, পাতার মার্মর শব্দ, শ্যামল শস্যের ভঙ্গিময় হেলাদোলায় মন ভরিয়ে তুলে। বিল-ঝিলের কাকচক্ষু জলে ঢ্যাপ, শাপলা-কমল-কলমির ফুটন্ত মুখগুলো ভরে আছে ¯িœগ্ধ লাবণ্যে। যেদিকে তাকাই, দেখি আলোকিত আকাশ, পাই সুরভিত বাতাস।
গ্রীষ্মের আকাশে গনগনে সূর্য-রোদ্রতপ্ত দিন। কৃষকেরা প্রত্যাশার দৃষ্টি-কখন বৃষ্টি নামবে, মাটির তপ্ত বুক জুড়াবে। বর্ষায় গায়ে গা ঘেঁষে হাঁটুজলে দাড়িয়ে থাকে ধান-পাটের বাড়ন্ত শিশুরা। এখানে মেয়েরা রঙ্গিন বেত দিয়ে বোনে শীতলপাটি। কলসি-কাঁখে নদী থেকে পানি আনে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে আঁচলে ছেঁকে ছোট ছোট মাছ ধরে। ইছামতি, পোড়াগঙ্গা, ধলেশ্বরী, পদ্মা, মেঘনা নদীর বাঁকে বাঁকে জেলেদের গ্রাম। নৌকা আর জাল নিয়ে সারাদিন তারা নদীর বুকে ভেসে বেড়ায় আর মাছ ধরে। পদ্মা-মেঘনায় ধরা পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। সুনিবিড় ছায়াঘেরা আমাদের গাঁয়ের পাশ দিয়ে শরতে-হেমন্তে নদীর বুকের চরে গজায় কাশ ও শরবন। শীতকালে জমে উঠে পিঠাপুলির উৎসব। মাঠে মাঠে রাখালেরা গরু চরায়। এ অঞ্চলের উর্বর মাটিতে ফলে নানা রকমের গোল আলু, গম, আখ প্রভৃতি। মৃৎশিল্পীরা মালসা, রসের ঠিলি, দইয়ের তেলাইন, খাঁসা, মাটির ব্যাংক প্রভৃতি তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকে। কামার সম্প্রদায় দা, বটি, টেডি, খুন্তি, ছেনি, হাসুয়া, ফুলকুচি ইত্যাদি তৈরি করে। তাছাড়া এই অঞ্চলে কিছুটা মানসম্পন্ন সুতার শিল্প, মুদ্রণ শিল্প, কুটির শিল্প, বেকারী শিল্পও গড়ে উঠেছে। বিক্রমপুরের শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্য পাতক্ষীরসহ মিষ্টি, দই, ছানা, রসমালাই ও আমৃত্তি বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকে এই অঞ্চলের ঘোষ পরিবারেরা। সাধু, ফকির, মস্তান, সাধক শ্রেণীর ব্যক্তিরা ভাদ্র মাসের বৃহস্পতিবার রাতে ঢোল বাজনার আওয়াজের তালে তালে ভেলা ভাসানোর উৎসবে মেতে উঠে। এছাড়া রথ উৎসব, খোদাই সিন্নি উৎসব, ঈদ মেলা, বিভিন্ন পূজার মেলা, বৈশাখী মেলা, নৌকা বাইচ মেলা, মনষা মেলা, দশমী মেলা, কৃষি মেলা, বইমেলা, নবান্ন উৎস প্রভৃতিতেও আপামর জনতা আনন্দে মেতে উঠে। এই এলাকার মানুষ সময় পেলেই সাঁতার বাইচ, নৌকা বাইচ, অলডুবানি, ষাঁড়ের লড়াই, পলানটুক, কুমীর ডাঙ্গা, কুস্তি প্রভৃতি খেলায় মেতে উঠে। কিছু বিয়ের মধ্যে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পালকির প্রচলনও প্রত্যক্ষ করা যায়। শীতকালে গভীর রাতে ওয়াজ মাহফিলের সাথে পাল্লা দিয়ে বয়াতী গানের আসরও বেশ জমে উঠে। কাজের অবসরে টেকের হাটে বসে লালন গানের আসর। শখের বশবর্তী হয়ে এই অঞ্চলের মানুষ পান চাষ করে। কর্মজীবনের ব্যস্ততার মাঝে সপ্তাহ শেষে পদ্মা নদীর চরে গড়ে উঠা মনোমুগ্ধকর পদ্মা রিসোর্ট দেয় প্রকৃতির স্বাধ। সব মিলে আমাদের বিক্রমপুর যেন এক মহান শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক অতুলনীয় ছবি। ’ একথা শুনে সানজিদা মুগ্ধ হয়ে গেল।

এর মাঝে ও আমার খোঁজ নিত কোথায় আছি। বেশিরভাগ সময় আমি যখন পড়তে বসতাম তখন আমার রোমে ওর হঠাৎ আগমন ঘটত। ও গল্প কবিতা পড়তে বেশ পছন্দ করত। আমি কিশোর কন্ঠ পড়তাম তাই ওকেও তাই পড়তে দিতাম। খুব মজা করেই পড়ত। যখনই আসত সাথে নতুন নতুন সংখ্যা ওর জন্য সর্বরাহ করতাম। ওর পরিচয় দিতে ভুলে গেছি ও হচ্ছে ঘাসভোগ গ্রামের আমার এক প্রিয় ভাগনী। প্রায়ই স্মৃতি বিজড়িত ঘটনাগুলি জীবন্ত হয়ে ধরা দেয় আমার মনে। ওর সাথে একটি পর্যায়ে অনেক গভীর বন্ধুত্ব হয়ে উঠে আমার। দুজনেই লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করি। ওর বাড়ি অনেক দূর। ইচ্ছা থাকলেও দেখা করার উপায় ছিলনা। শুধু ওর কথা ভাবতাম আর কবিতা লিখতাম। এক সময়ে ভাবলাম ওর সাথে আমার আর দেখা হবেনা। শুধু শুধু ওকে ভেবে কষ্ট পেয়ে লাভ নেই।

কয়েক বছর পর…
আমার চাচাত বোন আলেয়ার বিয়েতে আসছে দেখলাম। ওকে দেখেই মনে পড়ে যায় বিবর্ণ সেই অতীত। অতীতের অনেক স্মৃতি বার বার দোলা দিয়ে যাচ্ছে স্মৃতির জনালায়। এবার সানজিদা অনেক বড় হয়েছে কিন্তু আমার সাথে দেখা করেনি ভাবলাম হয়ত আমাকে ভুলে গেছে। তারপরও কয়েক বছর কেটে গেল। এর ভিতরে আর ওকে দেখিনি। ওকে সব সময় মিস করছি ও আমাকে মিস করছে কিনা জানিনা। কোন এক বিকেলে পড়ার টেবিলে বসে ওর কথা মনে পড়ায় কাকতালিয়ভাবে হঠাৎ ওর মত কাউকে দেখতে পেয়ে গলা হাকিয়ে ডাকলাম। দেরি না করে আমার ডাক পেয়ে একদম কাছেও চলে আসল। আনন্দভরা বাড়িতে সুন-সান নিরবতা। কিছুক্ষণের গল্পের ফলশ্রুতিতে আমাদের আগের বন্ধুত্ব সম্পর্কে ফিরে এল।
দীর্ঘদিন পর ওকে কাছে পেয়ে আমার কেমন আনন্দ লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা একদম। এই অনুভূতির সাথে জড়িয়ে আছে ওর সাথে অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া ধূসরস্মৃতি। ওকে দিয়ে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা করিয়ে আমি রীতিমতো অনেক ছবি তুললাম। যা বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অবশ্য সানজিদা ও আমি সেই পত্রিকা নিয়ে খুব মজা পেয়েছি। সানজিদা যে কদিন আমাদের বাড়িতে ছিল প্রতিদিন বিকেলে আমরা গল্প করতাম। একদিন দেখি ওর মনটি খুব খারাপ যখন আমি ওর ছবি যে পত্রিকায় বের হয়েছে তার কপি আনতে যাচ্ছি। পরে জানতে পারলাম আমি ওইদিন ওর সাথে গল্প করিনি বিধায় মনটি খারাপ ছিল। জানতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হল এই ভেবে যে আমিই শুধু ওকে ভালবাসিনা আমাকেও সে ভালবাসে।

ভূতের রাজ্য

গভীর ভুতুরে বনের ভেতর এত সুন্দর পুরাতন রাজভবন দেখে সবাই থ হয়ে গেলাম। বিকট আওয়াজের সাথে সাথে সহসা ফটক খুলে যাওয়ার অদ্ভুত দৃশ্য। কিছুক্ষণ আমরা ইতিউতি তাকালাম। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে গেলো। আমাদের অন্তরাত্মা শুকিয়ে কাঠ। ভয়ে আর বিস্ময়ে সবার শরীর যেন হিমশীতল হয়ে গেল। কারো মুখে কোনো কথা নেই। মাঝে কোটাল হিসেবে এক অপরূপা ডানাকাটা পরী দাড়াঁনো। স্বর্গের অপ্সরা দেখিনি, হয়ত এমনই হবে। তার কুহকে আমি আটকা পড়ে গেলাম।
পরীর ধবধবে আলোর সরপোশে পুরো পৃথিবী যেন বন্দী হয়ে গেছে। অভ্যাগত দেখে মাথা নেড়ে হাত বাড়িয়ে আমাদেরকে ভিতরে আসার সাদর আমন্ত্রণ জানাল। জংলা জায়গাটা নির্জন-বিজন হওয়ায়; ভূতের ভয়ে অনেকেই পড়িমরি দে ছুট! কেউ না গেলেও আমি একদম লোভ সংবরণ করতে পারলামনা। ওদিকে বন্ধু হাবিব বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মানা করলেও আমলে নিলাম না। আমি পরীর হাত ধরে ভেতরে আসতেই আচানক ফটকটি বন্ধ হয়ে গেল। এতক্ষণ ভয় কাজ না করলেও এখন তা হারে হারে টের পাচ্ছি। বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার সমেত বলবত্তর সান্ত্রীরা দাড়িয়ে গেল। কেউ কোন টুঁ শব্দ ও একদম নড়াচড়া করলনা। আমি ডানপিটে হলেও মনের রাজ্যটি অনেক অজানা শঙ্কা ও ভয় নামক ভূতেরা দখল করে নিল। সামনে পদসঞ্চার করতেই দেখা গেল তখতে তাউসে উপবিষ্ট বিশাল কলেবরে এক রাজা। পরীটি কোন কথা না বলে আমার হাত ধরে সামনে আগাচ্ছে। পরীর হাতের ছোঁয়ায় এক অন্যরকম আবেশ তৈরি হলো আমার মনে। আমরা মালঞ্চের ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। বিচিত্র ফুলের ঘ্রাণে মাতাল হল আমার হৃদয়। অদূরেই দাড়িয়ে আছে চোখ জুড়ানো মন কাড়ানো নানা রঙবেরঙ্গের বিশাল বিশাল দালান-কোঠা। রাজ্যটিকে এক কল্পপুরী মনে হল। পরী আমাকে নিয়ে জোরছে হাটছে। কী উদ্দেশ্যে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিছুই বলছেনা। পরীর কাছে ধরাশায়ী হয়ে মতিচ্ছন্ন হলেও হিম্মত সঞ্চার করে একবার চারদিকে ঝটিতি চোখের সার্চলাইট বুলাইয়া লইলাম। ওদের রাজ্যের একমাত্র বদ্যির কাছে আমাকে সমর্পণ করেই পরী হাওয়া। তারপর কি হল কিছুই খেয়াল নেই।
জ্ঞান ফিরার পর আমি পুরাতন অট্টালিকার সরু গলিতে ভূতুরে অন্ধকারের ভেতরেই আনমনে হাঁটছি আর হাটছি। আশপাশে ভূতুরে জঙ্গল দেখায় ভয়ে গা ছমছম করে উঠল। কিছুদূর যেতে না যেতেই আচমকা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠা আগুনের রুমে ঢুকে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম।
কিম্ভূতকিমাকার দশাসই চেহারার এক ভূতের উদয় হল আমার সামনে। হঠাৎ বাজখাঁই রকমের আওয়াজ ছাড়ল। আমি ভেবেই নিলাম একদম তাদের রাজ্যের গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছি। নিজেকে শত চেষ্টা করেও ভূতের নিগড় থেকে বের করতে পারছিনা। ভয়ে জড়সড় হয়ে কথা বলা শুরু করে দিলাম ভূতের সাথে। আমার কথা ভাল লাগায় কোনো ক্ষতি করল না।
অনেকদিন ভূতটির সব অদ্ভুত কর্মবিধি পর্যপেক্ষণ করলাম। একদিন বিশাল বড় এক কড়াই নিয়ে কয়েক টন তেল ঢেলে চুলায় আগুন দিয়ে গরম করছে। আর অনেক উঁচুতে দুই গাছের সাথে ডাল বেধে ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করছে। উদ্দেশ্য অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া। বুঝা গেল ভূতটি দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। সে অনেক বিশাল কাহিনী এখানে বলা অবান্তর। একপর্যায়ে তার সাথে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। তাদের রাজ্য ঘুড়ে দেখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করায় আমাকে মাটির নিচে একটি সুরঙ্গপথ দেখিয়ে দিল। বিদায় মুহূর্তে বলে রাখল বিপদ ঘটলে আমার নাম বলবে তখন সব ঠিক হয়ে যাবে। তার নাম শুললে সবাই ভয়ে থরথর করে কাঁপে। এমনকি রাজাও তাকে শাস্তি দিতে ভয় পায়। তার নামটিও বেশ অদ্ভুতÑ হাওরং। আমি এঁদো গলিতে মশাল হাতে অসিম সাহস নিয়ে হাটছি। একটিই আমার উদ্দেশ্য, ভূত কোথায় থাকে, কিভাবে থাকে, কী খায় ও কী করে তা নিজের চোখে দেখা। সামনে আগাতেই ইয়া বড় এক ছাদ দেখতে পেলাম। ধারণা করলাম ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান এমনই হবে। নিচেই অনেকগুলো ভূত একসাথে বসে আছে। অনেকগুলো চিৎকার-চেচামেচি, হুড়োহুড়ি করছে। অনেকগুলো আমার দিকে তেড়ে আসছে। সসঙ্কোচে বন্ধুর নাম বললাম। তারাও আমাকে কিছু করলনা। ওদের রাজ্যে অতিথিদের তুলসীপাতা দিয়ে আপ্যায়ন করে। আমাকে এক ভূত অনেকগুলি তুলশিপাতা এনে দিল। আমি কাচাই কচকচ করে চিবিয়ে খেলাম। কষ্ট ও ঘৃণাবোধ কিছুই কাজ করছিলনা তখন। তুলসীপাতা ভুঞ্জন শেষে কোথা থেকে যে হাতে এসে হাড়গোড় জমা হলো তা টের না পেলেও ভয় ঠিকই পেলাম। নিয়ম হল এগুলি তাদের কবরে রেখে আসতে হবে। কবরটি ভূতের আস্তানার একসাগর পরেই। আমি সাগর পার হয়ে তাদের কবরে পৌঁছলাম। ঠিক আমাদের মতোই কবর। তবে কোনো মাটি নেই সবকটি পাকা করা। কবরস্থানে গিয়েই বিভিন্ন ধরনের অদ্ভুত শব্দ ও গুমরে কাঁদার আওয়াজ কর্ণকুহরে পৌঁছল। আমি হাড়গোড় রেখে ওদের রেস্ট হাইজে গিয়ে বসলাম।
একটি প্রবেশদ্বার ছাড়া আলো-বাতাস ঢোকার মতো কোন বাতায়ন-ঘুলঘুলি লক্ষ্য করা গেলনা। অনেক দিন হল কোন ঘুম নেই। এখানে অবস্থান নেয়ার পর কেন যেন খুব করে ঘুম পেয়ে বসল। কোথা থেকে উৎকট হৃদয় নাড়ানো ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে তড়াক করে উঠে বসলাম। সেই নগরের কোটাল পরীর দেখা পেয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। পরী আমাকে সাগরের কিনারে নিয়ে গেল। দুজনেই জম্পেশে বসে মাছের খেলা ধুলা উপভোগ করতে লাগলাম।
আমার ইচ্ছা জাগল পরীর মতো নীল আকাশে উড়তে। তা কি সম্ভব? মানুষের ঘ্রাণ পেয়ে একদল কবর রক্ষী ভূত গিলোটিন নিয়ে আমাকে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ঘোর বিপদের মুহূর্তে ভূত বন্ধুর নামটি বেমালুম ভুলে গেলাম। পরী আমাকে দুটি পাখনা দিয়ে চলে গেল। আর ফিরে এলো না।
পরীর সাথে এটিই শেষ দেখা হবে আমি কল্পনাও করিনি। মানুষের চেয়েও মোটা মোটা তীর আমার দিকে তাক করে আছে ভূতের কমান্ডো বাহিনী। আমি তো ডানপিটে দমবার পাত্র নই! ওদের তীর আমার দিকে আসতেই খপ করে ধরে ওদের দিকেই ফিরিয়ে দেই। আমার দেয়া তীরে ওদের অনেকে ধরাশায়ী হয়ে তড়পাতে থাকল।
অনেকেই মারা পড়ল। ভূতদের অবস্থা বেগতিক দেখে ওদের আস্তানায় খবর পাঠায়। দলে দলে ভূত আসতে দেখে পরীর দেয়া ডানা মেলে দিলাম নীল আকাশে ঝাঁপ। এবার সত্যি সত্যি আমি আকাশে উড়ছি। পরীর রাজ্যে ফিরে যাবো। ভাবছি আর পুলকিত হচ্ছি। মায়ের ডাকা ডাকিতে ঘুম থেকে উঠলাম। মনে মনে ভাবলাম ইশ! মা তুমি আমার স্বপ্নটাই শেষ করে দিলে। ফজরের নামাজ শেষে মাকে স্বপ্নে যা যা দেখছি আদ্যোপান্ত খুলে বললাম।
সিরাজদিখান, মুন্সিগঞ্জ
(২৬ ডিসেম্বর ২০১৩, বৃহস্পতিবার) গল্পটি নয়াদিগন্তে প্রকাশিত। এটি আমার লেখা ২য় গল্প।

পাথরঘাটা এবং তাসনীম

ফোনে আশরাফের কথা শেষ হতে না হতেই বিছানা থেকে তড়াক করে উঠে তাসনীম। না খেয়েই ঝটপট সেজেগুজে বের হয়। আকাশে মেঘ জমেছে। যে কোন মুহূর্তে বৃষ্টি নামতে পারে। এখন কী করবো? কিভাবে যাবো? নাহ কথা দিয়েছি যেতেই হবে। তার সাথে দেখা করতেই হবে। পাথরঘাটা যাওয়ার ব্যাপারে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল তাসনীম।
আশরাফ কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে সামনে দিয়ে বয়ে চলা নদীর দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে। আজ স্বপ্নঘেরা কাঙ্খিত সেই দিন। ভাবতেছে প্রিয়া কখন আসবে। কখন দেখা হবে। অপেক্ষার প্রহর যেনো শেষ হতে চায় না।
তাসনীমকে দেখে মনে হচ্ছে যেনো গোলাপ কাননে সদ্য গজানো ফুলের কলি। তরতাজা লাল গোলাপের দীপ্তি অঙ্গজুড়ে। বেশ আকর্ষণীয়, অপূর্ব সুন্দরী, প্রখর মেধাবী। সে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
আশরাফ প্রখর মেধাবী। ওর দক্ষতা, যোগ্যতা ও মেধার কারণে এলাকার বিভিন্ন সামাজিক, অনুষ্ঠানে যেতে হয়। এভাবে কোন এক অনুষ্ঠানে তাসনীমের সাথে আশরাফের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কটা এমন, যেনো বিনিসুতার মালা। কেউ কাউকে ছাড়তে পারেনা। একজনকে ছাড়া অপরজনকে কল্পনাই করা যায় না। দু’জনের মাঝে বয়সের সামান্য পার্থক্য থাকলেও মনের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
তাসনীম পাথরঘাটায় এসে একগাল হাসি দিয়ে আশরাফকে উষ্ণ অভিবাদন জানায়। এমন হাসি মুখের দিকে সারা জীবন চেয়ে থাকা যায়, এই হাসি জীবনেও ভোলা যায় না। আশরাফ ওর হাতে একটি গোলাপ দিয়ে বলল, ‘আই লাভ ইউ’। তাসনীম লজ্জা পেলো। ও আশরাফের গালটা ছুঁয়ে বলল, আমিও। সেকেন্ডের একটি স্পর্শ আশরাফের সূক্ষè অনুভূতিকে ভীষণভাবে নাড়া দিল। আশরাফও লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে আছে। দুরুদুরু বুকে তাসনীমের হাত ধরে। এই প্রথম কোনো নারীর হাত ধরে, পাশে বসে, গন্ধ শুঁকে, ছুঁয়ে দেখে আশরাফ।
এই পাথরঘাটা তাদেরকে স্বচ্ছ অতীতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দূর্বার গতিতে। মনে পড়ছে এর আগে ২ বার এখানে আসার বিষয়টি। প্রায়ই স্মৃতি বিজড়িত ঘটনাগুলি জীবন্ত হয়ে ধরা দেয় তাদের মনে।
ঈদের পর দু’জনের সাক্ষাৎ হওয়ায় একে অপরকে বখশিশ দেয়। সাথে নীল খামের চিঠিও। দু’জনে মনের আনন্দে হাতে হাত রেখে হাটতে থাকে। নদীর পারে সাদা সাদা কাশফুল, সাড়ি সাড়ি ইঞ্জিন চালিত নৌকা, জেলেদের মাছ ধরা, পানকড়ির মাছ শিকার, দক্ষিণের দিকটায় বসে থাকা মাছরাঙাটির টুইট টুইট শব্দ, নদীর উপর নীল আকাশে রংবেরঙ্গের পাখি উড়া, উথাল-পাথাল ঢেউ এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও রূপলাবণ্য দেখে দু’জনই মুগ্ধ। ওপাড়ে দেখা যাচ্ছে বিস্তীর্ণ প্রান্তর। ধানের শীর্ষে মৃদু দোলা দিয়ে যাচ্ছে স্বর্গীয় বাতাস। দেখে মনে হচ্ছে কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা বিমূর্ত ছবি। পাঁকা ধানের গন্ধে ভরে গেছে চারপাশ। গ্রীষ্মের চিরচেনা রূপ অকৃপণভাবে বিলিয়ে দিচ্ছে এ ধরায়। দু:খভরা যে কোনো মানুষ যদি প্রকৃতির এ রূপে অবগাহন করতে পারে পরিপূর্ণভাবে, তাহলে তার দু:খ কষ্ট উধাও হয়ে যাবে। সেখান থেকে চলে আসার পর দু’জনেই ভাবল বেশ ভালই কাটছিল মুহূর্তগুলো। তখনও আশরাফ বুঝতে পারেনি সামনে কতটা অমসৃণ পথ অপেক্ষা করছে।
একদিন স্বপ্নে দেখি তাসনীম আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসছে। খুশিতে আমার শরীর কাঁপতে শুরু করল। সন্ধায় পেয়ারা গাছের নিচে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওর সাথে অনেক গল্প করলাম। রাতে আমার রুমেও নিয়ে গেলাম। যেখানে আমি পড়াশুনা ও সাহিত্যচর্চা করি সেখানে। খাটের উপর বসে দু’জন চুপচাপ একে অপরের দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে আছি। কেমন যেনো এক ভাল লাগার মতো অন্ধ আবেগ। আমরা মুহূর্তে ভুলে গেলাম পৃথিবীর সব ক্লেদ ঘৃণা। ভালোবাসায় সিক্ত হলাম। কিন্তু জীবন যেনো কেমন। মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। ৫ মিনিট পর বেরিয়ে আসি বিড়াল পায়ে গলাগলি করে। তাসনীম আমার বুকে হাত রেখে কথা দিল আমাকে কোন দিন ভুলবেনা, কষ্ট দিবেনা ও যত বাধাই আসুক আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। বাহির থেকে জানালা দিয়ে আমি আবারও গল্প জুড়ে দিলাম। এক পর্যায়ে কোনো কারণে তাসনীম কষ্ট পাওয়ায় আমার চোখের কোণে জমা থাকা ক ফোটা পানি মাটিতে পড়ল। কোন মেয়ের ভালবাসা অর্জনের জন্য জীবনে এই প্রথম কান্না। ও আমার চোখের জল আলতো হাতে খুব যতœ করে মুছে দিচ্ছে। আমাকে ক্ষমা করে দেয়ায় এবং তাসনীমের নরম হাতের ছোঁয়ায় কান্না থেমে যায়। তখনই বোঝলাম ও আমাকে কতটা ভালবাসে। ওর মার্জিত রুচি, তীক্ষœ বুদ্ধি, সংযত ভাষা, বিনীত ব্যবহার মোটকথা ওর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বে আমি সম্মোহীত হই। ওর গুণে মুগ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেই যে করেই হোক ওকে আমার জীবন সাথী করা চাই। দিনে কয়েকবার তাসনীম আমাকে ফোন দিত। সে কী মধুর আলাপ। প্রতি পরতে পরতে ভালোবাসার অপরূপ প্রকাশ। চিঠির মাধ্যমে আমরা একে অপরের কাছাকাছি আসতে পারা। মোবাইলের মাধ্যমে আমাদের আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা গভীর থেকে গভীরতর হওয়া। সেদিন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। ও সোজাসাপ্টা জবাব দিল তোমাকে আমি আজ থেকে মুক্ত করলাম, ছেড়ে দিলাম। ভিরমি খাওয়ার জোগাড়, হঠাৎ কি হতে কি হয়ে গেলো আমি কিছুই বোঝলামনা। চারদিক অন্ধাকার হয়ে গেলো। সুখের গগনে দেখা দিল কালো মেঘের ঘনঘটা। কষ্টে চোখ ভিজে গেলো। কী উত্তর দিবো? হারাবার ভয় আছে বলেই হয়ত পৃথিবী এত সুন্দর। আমি বললাম, পাওয়ার সুখের চেয়ে হারানো দু:খে ভালোবাসাকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করা যায়। সব অপ্রাপ্তি, অপূর্ণতা ও ব্যর্থতা সত্ত্বেও আমি হতাশ নই, কারণ আগুনের দরিয়া সাঁতরে স্বপ্ন সম্ভাবনার শান্ত-শীতল দীঘিতে অবগাহন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। অস্থির হৃদয়টা কেঁদে ওঠে তাসনীমকে নিজের করে পাওয়ার জন্য। কিন্তু চেষ্টার ফল ব্যর্থ ভেবে একাকিত্ব জীবন বেছে নেই। এর পর শেষ বারের মতো ওর সাথে দেখা করি। ওকে নিয়ে আমার রচিত একটি গল্প প্রিয়জনে প্রকাশিত হওয়ায় উপহার হিসেবে দিয়ে বিদায় নেই। কোনোমতে পরিবেশটা ম্যানেজ করে নিজের ভেতরের কষ্টকে দমিয়ে রাখি। আর পিছনে ফিরে তাকাইনি। অনেক মন খারাপ করে জনমের মত ওর ইচ্ছায় আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিটিকে বিদায় দিয়ে আসি। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে আমার বুক চিরে। মহা ধুমধামে ওর বিয়ের আয়োজন চলছে। ভালোবাসার মানুষটি বধূর সাজে অন্যের ঘরে চলে যাচ্ছে। ভাবতেই গা শির শির করে উঠে। শুধু ওর পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে আমার সুখকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছি। সত্যি আমি তাসনীমের প্রেমে এতটা পাগল ছিলাম যে, তখন ও যা বলতো আমার কাছে মনে হতো এটাই পৃথিবীর অনেক বড় সত্য। ভালোবাসা কী? আমি জানতাম না। আজ আমার মনে হচ্ছে ভালবাসা মানে দু’টি মনের মিলন। দু’টি দেহের একটি আত্মা! একই সাথে মিশে যাওয়া। আমি যে ওকে ছাড়া একটা দিনও থাকতে পারি না। সে কথা কি ও জানতো না। তবে কেনো চলে গেলো অন্যের কাছে এভাবে—
সেসব স্মৃতি আমাকে শুধু তাড়া করে বেড়ায়। রবি ঠাকুরের ভাষায়, সখি ভালোবাসা কারে কয়, সেকি শুধুই যাতনাময়। রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর কথায়, ভুলে যাবো বলে এত দূর আসা তবু ভুলে গেছি কিন্তু ভুলে থাকতে পারিনি।
ওকে ছাড়া আমার এ জীবন শূণ্য মরুভূমির মতো। ওর পাঠানো ইনবক্সে পুরনো এসএমএস পড়ি। চোখে জল ধরে। ঠোঁট কাঁপে। ভালোবাসার ফুলগুলো দাগ রেখে যায়। গল্প হয় অন্যের। রোমিও-জুলিয়েট, লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রাধা-কৃষ্ণ, কিংবা মমতাজ-শাহজাহানের মতো। প্রেম ভালোবাসা দিয়েই পৃথিবীতে এরা প্রিয়জনকে পাওয়া না পাওয়ার মাধ্যমে ইতিহাস গড়ে গেছেন।
সবই আছে স্মৃতির আঙ্গিনায়। শুধু তাসনীম নেই। অর্থহীন পড়ে থাকে জীবন। এখনও আমি খুঁজে বেড়াই ওকে আমার মাঝে। ওর দেয়া চিঠি ও ছবিগুলি বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকি। বিধাতার অমোঘ নিয়মকে মেনে নিয়েছি।
রাতে আশরাফের মন খারাপ দেখে বুঝতে পেরে ওর আদুরে ছোট বোন মাকছুদা জিজ্ঞেস করে, ভাইয়া তোমার কি হয়েছে আমার কাছে বল। অনেক পিড়াপিড়িতে বলতে বাধ্য হয়। ঘটনার বর্ণনা শুনে মাকছুদা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
আশরাফ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে। বিচ্ছিন্নতার নির্মম বাস্তবতা ওর কষ্টের মাত্রা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করছে না। সারাক্ষণ দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের ভেতর মনের মানুষকে নিয়ে গল্প লিখে আর শুয়ে থাকে। কারো সাথে কোন কথা বলে না। শুধু নির্জনে বসে তার অতীত স্মৃতি রোমন্থনে মগ্ন থাকে। কোনো কিছুই ওর চিন্তায় ছেদ পড়ছেনা।
ডাক্তার দেখানো হলো ওকে। ডাক্তার বলল, ছেলেটি মানসিক দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে। তাই ও রাতে ঘুমাতে পারে না। ঠিক মতো ঘুম না হলে কিডনির সমস্যাই বেশি হয় এবং অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে ও মারাও যেতে পারে। আশরাফ এখন যে অবস্থায় আছে, ও যেকোনো সময় স্ট্রোক করতে পারে।
অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে ও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। যে করেই হোক আশরাফকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। ডাক্তার উপদেশ দিয়ে চলে যায়।
মতিচ্ছন্নের মতো ভোঁভোঁ মাথায় কয়েকদিন এলোমেলো পথ খুঁজতে লাগল আশরাফ। একদিন ও কোথায় যেনো গেলো আর ফিরে এল না।

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, মাসিক বিক্রমপুর