মরহুম মাওলানা আব্দুল খালেক (র.)

মরহুম মাওলানা আবদুল খালেক

মরহুম মাওলানা আবদুল খালেক

এক অনন্য চরিত্রের অধিকারী মহামনীষী, যার অসাধারণ চারিত্রীক গুণাবলী সকলকেই সমভাবে কাছে টানতো, সকলে একই রকম ভালবাসা অনুভব করত তার কাছ থেকে। তার সেই চারিত্রীক চুম্বকীয় আবেশে ধর্ম-বর্ণ, উচু-নীচু, ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, জ্ঞানী-অজ্ঞানী সকলকেই অকৃত্রিমভাবে আবেশিত করে তুলত। মানুষের কাছে তার চরিত্রের এই দিকটিই সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের, যেই তার সংস্পর্শে এসেছে সেই ভাবত পৃথিবীতে তাঁর সাথেই হয়ত মাওলানা সাহেবের সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা, তিনি তাকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন। তাই মৃত্যুর এত বছর পর এসেও মানুষেরা তাঁর সেই ভালবাসা অনুভব করে একইভাবে, আর সেই ভালবাসার মানুষের অনুপস্থিতি তাদের মর্মে আঘাত হেনে অশ্রু নদীর বাঁধ ভেঙ্গে দেয়, স্রোতধারার মতো দুগন্ড বেয়ে ঝড়ে পরে বুক ফাটা বোবা কান্নার নোনা জল। আজও তাঁর গুণগ্রাহীরা যেকোনো সমস্যায় আক্রান্ত হলে তার সুষ্ঠ সমাধানের দিনগুলির কথা স্বরণ করে দুঃখের মাতম করে। তাঁর স্মরণে এই সমস্ত হাজার হাজার ভক্ত অণুরাগীরা প্রতি বছর তার ইছালে ছওয়াব মাহফিলে জমায়েত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরে। তাঁর এলাকা বাসী প্রতি বছর তার স্মরণে ইছালে ছওয়াব মাহফিল করে থাকে। এই মহা মনীষীর নাম মাওলানা মোহাম্মদ আবদুলল খালেক (র.)। তিনি ২২ পৌষ ১৩৪৭ বাংলা সাল মোতাবেক ৫ জানুয়ারী ১৯৪১ ইংরেজী সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানার অন্তর্গত লতব্দী ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামে ঐতিজ্যবাহী সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল হাই বেপারী, মাতার নাম তছিরুন নেছা। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিঁনি দ্বিতীয়। তাঁর পূর্ব পুরুষরা এই এলাকার আদি বাসিন্দা, তাঁর বংশ ইতিহাস থেকে জানা যায় মাওলানা সাহেবের দাদার নাম রৌশন আলী বেপারী, তার পিতার নাম মোহাম্মদ হানিফ বেপারী, তার পিতা মদন মুন্সি, তার পিতা মোহাম্মদ মানু বেপারী, তার পিতা পাচু বেপারী। পূর্ব পুরুষদের মধ্য থেকে মদন মুন্সি একই উপজেলার তাজপুর গ্রাম থেকে সর্ব প্রথম এই এলাকায় এসে নিবাস গড়েন, সেই থেকে আজো তারা বংশ পরম্পরায় এখানেই আছেন। এই মহা মনীষী পারিবারিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন, তারপর মধ্যপাড়া ইউনিয়নের পুরাতন মোস্তফাগঞ্জ মাদ্রাসায় কিছু কাল অধ্যায়ন করেন। সেখান থেকে পরবর্তীতে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার সোনাহাজরা মাদরাসায় অধ্যায়ন শুরু করেন, এবং এই মাদরাসা থেকেই ১৯৫৯ সালে দাখিল ও ১৯৬৩ সালে কৃতিত্বের সাথে আলিম পাস করেন। তারপর বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা থেকে ১৯৬৫ সালে ফাজিল পরীক্ষায় বোর্ড স্ট্যান্ডে উত্তীর্ণ হন, একই মাদরাসা থেকে ১৯৬৭ সালে কামিল পরীক্ষায় তিন নাম্বর বোর্ড স্ট্যান্ড করেন। এতবড় জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার পরও সব সময় নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন। ছাত্র অবস্থাতেই তার জ্ঞানের কথা ছাত্র শিক্ষকদের গন্ডি পেরিয়ে অনেকদূর ছড়িয়ে পরে, আর তাই তাঁর কামিল পরীক্ষার রেজাল্টের পর ইরানী দূতাবাসের মাধ্যমে তৎকালীন ইরান সরকার তার দেশের এক বিদ্যাপিঠে শিক্ষকতা করার জন্য আহ্বান করেন, তিঁনি তার সেই প্রস্তাবনার কথা মাকে জানালে তাঁর মা বলেছিল তোকে এত বড় আলেম বানালাম এলাকায় থাকবি এলাকায় থেকে এলাকার মানুষদের ভালমন্দ দেখবি বলে, বিদেশ চলে গেলে এদের দেখবে কে? তিনি মায়ের কথা রক্ষা করার জন্য এলাবাসীর ভালবাসার টানে এত বড় লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে পাশবর্তী টঙ্গিবাড়ী থানার বেতকা গ্রামে এক অখ্যাত মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন। এই মাদরাসায় চাকুরীর সময় একই থানার নিতিরা গ্রামের পীর মরহুম মৌলভী আব্দুল মজিদ খন্দকারের ছোট মেয়ে হাসিনা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেই মাদরাসায় বেশ কয়েক বছর চাকুরী করার পর মায়ের আরো পাশাপাশি থাকার জন্য পাশবর্তী গ্রাম নিমতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চলে আসেন। এখানে দুই বছর চাকুরী করার পর মায়ের অনুমতি নিয়ে শ্রীনগর থানার গাদিঘাট মাদরাসার সুপার/প্রধান হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। সেখানেও তার বেশি দিন থাকা হয়নী মায়ের দাবি রক্ষার্থে, তিঁনি তার মা এবং এলাকার মানুষদেরকে এত বেশি ভালবাসতেন যে শেষ পর্যন্ত সেই ভালবাসার টানে মাদরাসা সুপারের চাকুরী ছেড়ে পূণরায় সেই নিমতলা প্রাইমারী স্কুলে চলে আসেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানেই চাকুরীতে নিয়জিত থাকেন সেই সহকারী শিক্ষক হিসেবেই। মাঝে বহুবার বহু শিক্ষা অফিসার তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রমোশন দিতে গেলে তিনি প্রতিবারই তাদের সেই কথাকে ফিরিয়ে দেন বিনয়ের সাথে। প্রধান শিক্ষকদেরকে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক সময় অনেক বিষয়কে বাড়িয়ে কমিয়ে উপ¯’াপন করতে হয় এই বিষটি তাকে প্রধান পদের প্রতি নিরুৎসাহিত করে। তিনি সত্যের সাথে কোনো কিছুর বিনিময়েই আপোষ করেননি কখনো, প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে থাকলেও তার শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাননি, আমলের এতটুকুও ঘাটতি পরেনি কখনো, বাড়িতে বসেই চালিয়ে গেছেন আধ্যাতিক জ্ঞান চর্চা। প্রাইমারী স্কুলে চাকুরী করলেও তার জ্ঞান চর্চায় কোনো ভাটা পরেনি, এখানে চাকুরী করার সময় তিঁনি ইসলামী শরীয়তের বিভিন্ন বিষয়ের সঠিক মাসয়ালার ফতওয়া দিতেন। তার দেয়া ফতওয়া খন্ডন করার দূঃসাহস সমসাময়ীক কোনো আলেমেরই ছিলনা। এই ধরনের ফতওয়া দিয়ে অনেক বার অনেক বড় বড় আলেমের সাথে তার বাহাস হয়েছিল আর প্রতিবারই বাহাসে তিঁনি বিজয়ী হয়েছেন। এমন এক বাহাসের কথা মানুষ এখনো ভুলতে পারেনি, সেই সময় শরীয়তের জটিল বিষয়ের যেকোনো সমাধান তিনি করলে সমস্ত আলেমগণ তা নির্দিধায় মেনে নিতেন যারা তার পান্ডিত্যের কথা জানত। তৎকালীন সময়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার প্রধান মাদরাসা ইসলামপুর কামিল মাদরাসায় এক ভাইস প্রিন্সিপাল এসেছিলেন, তিনিও খুব বড় মাপের আলেম ছিলেন। একাধারে বেশ কয়েকটি ভাষায় জ্ঞান রাখতেন। তিঁনি মাওলানা সাহেবের জ্ঞানের পরিধি সম্বন্ধে তেমন একটা ওয়াকিব হাল ছিলেননা। তখন এক জটিল মাসয়ালা সম্বন্ধে মাওলানা সাহেব ফতওয়া দেন। যে ব্যক্তির বিষয় নিয়ে ফতওয়াটি দেয়া হয়েছিল ফতওয়াটি তার প্রতিকূলে গেলে তিঁনি সেটির জন্য আরো সহনশীল সমাধান চেয়ে সেই ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে গেলে তিঁনি তার মাসয়ালায় আরেকটু সহনশীল ফতওয়া প্রদান করলে তা নিয়ে এলাকায় বিশালভাবে বিতর্ক তৈরী হয়। এই বিতর্কের অবসান ঘটানোর জন্য শেষ পর্যন্ত বাহাসের আয়োজন করা হয়। বাহাসটি নিয়ে সর্বস্তরে কৌতূহলের অন্ত ছিলনা। একেতো মাওলানা সাহেব, অপরদিকে এক মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল, তাই বাহাসে সাধারণ জনগণের পাশা-পাশি অনেক বড়-বড় আলেমগণ উপ¯ি’ত ছিলেন। নির্ধারিত সময়ে বাহাস শুরু হলে কোন ভাষায় বাহাস হবে সেই নিয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল সাহেব প্রশ্ন তোললে মাওলানা সাহেব তাকে বিনয়ের সাথে বলেন বাংলা, উর্দু, ফার্সী, আরবী যেকোনো ভাষায় আপনার পছন্দ সেই ভাষাতেই হোক। শেষ পর্যন্ত বাহছ হয়েছিল উর্দু ভাষায়, বাহাস অনুষ্ঠানে ভাইস প্রিন্সিপাল সাহেব সেই ফতওয়া সমন্ধীয় অনেক কিতাব সাথে নিয়ে এসেছেন, আর মাওলানা সাহেব এসেছেন খালি হাতে। অনেক সময় ধরে বাহাস চলে, বাহাস চলাকালীন সময়ে তার শরীয়তি জ্ঞানের পান্ডিত্য দেখে উপ¯ি’ত আলেমগণ মুগ্ধ হয়ে পরেন। শেষ পর্যন্ত সেই বাহাসেও মাওলানা সাহেব বিজয়ী হয়েছেন আর বাহাসে হেরে ভাইস প্রিন্সিপাল সাহেব পূণরায় মাদরাসায় ঢুকেননী, সেখান থেকেই চলে যান চাকুরী ছেড়ে। তাঁর অসাধারণ জ্ঞানের কারণে তিঁনি ছিলেন এলাকার সমস্ত আলেমদের চোখের মনি, শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি আলেমদের মাঝে কোনো ভেদাভেদ করেননি, কমওমীয়া-আলিয়া বলে তার কাছে কোনো ব্যবধান ছিলনা। আশেপাশে বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, অনেক মাদরাসার কার্যকরী পরিষদের সভাপতি ও সেক্রেটারী ছিলেন। এই মহামনীষী জ্ঞানের দিক দিয়ে যেমন ছিলেন আধ্যাত্মিক দিকে ছিলেন আরো বেশি এগিয়ে। মানুষের সাভাবিক জীবনের বিভিন্ন জটিল বিষয়ের আধ্যাত্মিক সমাধান দিয়ে মানুষের সাথে একাকার হয়ে আছেন। প্রতিদিন সকাল বেলা তাঁর বাড়িতে লোকের ভীর লেগেই থাকত, মানুষের কত ধরনের সমস্যা এই সমস্ত লোকের ভীর থেকেই জানা যেত, কারো জ্বর, মাথা ব্যথা, আমাশয়, চোখে কম দেখে, চোখ উঠছে (উদাইছে), ভয় পায়, বিছানায় প্র¯্রাব করে, ছোট বা”চা কান্না করে, সাপে কাটছে, কোথাও কেটে গেছে, জ্বীনে আছর করছে, সন্তান হয়না, বিবাহ হয়না, স্বামী-স্ত্রীর মনো মালিন্য, সন্তান কথা শোনেনা, জন্ম বোবা, বুকের কড় বাড়ছে, হাপানি, বান মারছে, চুরি হইছে, গরুতে দুধ দেয়না, গরুতে লাথি মারে, ফসল নষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে, ফলন কম হচ্ছে, কারো মুখ লাগছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলি ছাড়া পুরুষ ও মহিলাদের আরো নানাবিধ যত ধরনের জটিল সমস্যা আছে সে সবের আধ্যাত্মিক সমাধান দিতেন। এর জন্য তিঁনি কখনো বিরক্তি বোধ করতেননা এবং কোনো ধরনের টাকা পয়সা নিতেননা। তার আধ্যাত্মিক শক্তি এতই প্রখর ছিল যে সেগুলি অনেকের কাছে অলৌকিক বলেই মনে হতো। তাঁর এই ধরনের আধ্যাত্মিক বিষয়ের অনেক বাস্তব ঘটনা মানুষের মুখে মুখে এখনো প্রচলিত রয়েছে। মাওলানা সাহেব এক বার বাড়িতে ব্যবহারের জন্য মুলি বাঁশ আনতে গেছেন সেখানে মুলির কাজ করার সময় মুলির ধারালো প্রান্তের সাথে লেগে এক লোকের নাকের হাড় সহ কেটে গেলে আর রক্ত থামানো যাচ্ছিছলনা। এক ব্যক্তি খুব শক্ত করে ধরে রক্ত থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল তবু রক্ত বেরুচ্ছিল; এসব দেখে মাওলানা সাহেব সামনে গিয়ে বললেন দেখি কি হয়েছে, তিঁনি লোকটিকে হাত সরিয়ে নিতে বললেন। লোকটি হাত সরিয়ে নিলে তিনি সেখানে তাঁর মুখের লালা দিয়ে নাকের বাশিটি সহ চামড়াটি লাগিয়ে দিলেন সাথে সাথে রক্ত থেমে গেল ও কাটা জায়গা জোড়া লেগে গেল। এই ঘটনা দেখে উপস্থিত সবাই তাজ্জব হয়ে গেল। একবার শুষ্ক মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে জমি শুকিয়ে ফেটে চৌচির, ফসলাদি সব নষ্ঠ হয়ে যাচ্ছিল, তখন সেঁচের এত উপকরণ ছিলনা। সেঁচের বহুল প্রচলিত মাধ্যম ছিল দোন (আলকাতরার টিটের কৌটার এক প্রান্ত কেটে রশি বেঁধে তৈরী করা সেঁচের জন্য) সেটি দিয়ে এই মাটি ভেঁজানো সম্ভব ছিলনা। এলাকার লোকজন মাওলানা সাহেবের কাছে গেলে তিনি সকলকে মাঠে জড়ো করে দ্ইু রাকাত নামাজ পড়ে, নামাজ শেষে দাঁড়িয়ে দুহাত আকাশের দিকে তুলে দুয়া করলেন; দোয়া শেষে বৃষ্টি ঝরায় মাঠের কেউ সেই বৃষ্টিতে ভেঁজা ছাড়া বাড়ি পৌঁছতে পারেনি। তাঁর মাধ্যমে এই ধরনের ব্যাপার অনেক জায়গায় অনেক বারই ঘটছে। বাজারের দোকানদারা হিন্দু হোক মুসলিম হোক যারা ব্যাপারটি লক্ষ্য করছে তারা মাওলানা সাহেব তার দোকানে আসলেই খুশি হয়ে যেতেন, কারণ ছিল তিঁনি দোকান থেকে কোনো মাল কিনলে সেদিন তার কেনার পর থেকে দোকানের বিক্রি বেড়ে যেত। এমন অনেক বাস্তবতা আছে যা মানুষ ভুলতে পারেনি, লোক থেকে লোক হয়ে ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। বাজারের এক ফলের ব্যবসায়ী পাঁকা আম নিয়ে অনেক বিড়ম্বনার মাঝে ছিল, আগের দিন যেভাবে সেল হওয়ার কথা ছিল সেভাবে সেল না হওয়াতে মজুদকৃত আমের অধিকাংশই রয়ে গেছে, যেগুলি বিক্রী হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ। আর সেদিন বিক্রী না হলে পুরোটাই লোকসান, বিক্রেতা ভেবে অস্থির এবার নির্ঘাৎ মাথায় হাত। কিন্তু সকাল ভোরে এসে মাওলানা সাহেব তার প্রথম ক্রেতা হিসেবে পাঁচ কেজি আম কিনেছে, তিনি আম নিয়ে চলে যাবার পর অল্প সময়ের মধ্যেই তার সব আম বিক্রি হয়ে গেছে; যেখানে আগে লোকসান গুণার কথা ছিল সেখানে সাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ব্যবসা হইছে। তার জীবনের এই ধরণের অনেক বাস্তবতা মানুষের মনে গেঁথে আছে যা তারা ভুলতে পারেনা এখনো সেই ধরনের পরিস্থিতি সামনে আসলে তার সেই কথাগুলি স্মরণ করে। তাঁর কাছে জাতি-ধর্ম কোনো ভেদাভেদ ছিলনা। তিঁনি মানুষ হিসেবে সকলকে সমানভাবে ভালবাসতেন, সেই ভালবাসা ভক্ত হৃদয়েও প্রবলভাবে দোলা দিত। মৃত্যুর পর তাকে শেষ বারের মতো দেখতে জনতার ঢেউ বয়ে গেছে চারি পাশে, এই জনতার মিছিলে সকল জাতের লোকেরই সমাগম ছিল যা মহা আশ্চর্যের। মৃত্যুর দিন আকাশ ছিল মেঘা”ছন্ন, কফিনের উপর সারক্ষণ মেঘের ছায়া পড়েছিল, কফিন কবরে রাখা পর্যন্ত সেই ছায়াটি তার সাথে সাথেই ছিল। আকাশের মাঝে পাখিদের করুন আহাজারি সকলের হৃদয় নাড়িয়ে দিছে, আকাশ জুড়েছিল পাখিদের ভীড় কত রকম পাখি তার ইয়াত্তা নেই। তার মৃত্যুর বহু আগেই এলাকা থেকে শকুন উধাও হয়ে গিয়েছে। অথচ মৃত্যুর দিন অসংখ্য শকুন চিলেরা সারা আকাশ জুড়ে উড়ে বেড়িছে আর তাদের ভাষায় নানাবিধ শব্দ করে শোকের মাতম করে গেছে সে দৃশ্য এখনো উপস্থিত জনতার চোখে ভাসে। এই মহামনীষী ৩ ফাল্গুন ১৪০৭ বাংলা সাল মোতাবেক ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০০১ ইংরেজী সালে রাত ০১ টায় সংসারে ছয় ছেলে ও তিন মেয়েকে রেখে ইহলোক ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি স্পষ্টভাবে সুরায়ে ইয়াছি পাঠ করেন, তার পর কালিমা পরতে পরতে এ জগৎ ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যান না ফেরার দেশে।